মধ্যডাঙ্গা মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল নিয়ে বিরোধ
রায়হান তানভীর খুলনা
কুষ্টিয়ার নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা গ্রামের মধ্যডাঙ্গা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসাকে ঘিরে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল আয়োজন নিয়ে মতবিরোধের জেরে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সভা থেকে শুরু হওয়া বিরোধ এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর একাধিক মাহফিল হলেও এবার গ্রামবাসীরা সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব করেন—একই এলাকায় তিনটি মাহফিলের পরিবর্তে একত্রে একটি মাহফিল করার। এ বিষয়ে মাদ্রাসা কমিটির সভায় সভাপতি আলহাজ্ব দাউদ হায়দার গ্রামবাসীর সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দেন। কিন্তু মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
পরদিন সকালে কমিটির কিছু সদস্য ও এলাকাবাসী মাদ্রাসার অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। তবে সন্ধ্যার আগেই ওই তালা খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষকরা।
মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান জানান—সভায় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মুহতামিম সভাস্থল ত্যাগ করেন। তবে শিক্ষা কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। তিনি চান, সবাই মিলে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে নিক।
অন্যদিকে, অভিযোগ উঠেছে—একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঘটনাটিকে বিকৃতভাবে প্রচার করে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। গ্রামবাসীর মতে, সভাপতি আলহাজ্ব দাউদ হায়দার দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, ব্যক্তিগত অর্থে বিদ্যুৎ বিলসহ প্রায় ১১ লাখ টাকা দেনা পরিশোধ করেছেন—যা কখনো ফেরত নেননি। তাই এমন একজন দানশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
প্রশ্ন উঠছে—তুচ্ছ কারণে শুরু হওয়া এই বিরোধকে কে বা কারা বড় আকার দিতে চাইছে?
প্রশ্ন উঠছে—মাহফিল আয়োজন নিয়ে প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ধর্মীয় অনুশীলন, নাকি এর পেছনে রয়েছে প্রভাব বিস্তার ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব?
প্রশ্ন উঠছে—একটি মহল কেন দানশীল ও মানবিক ব্যক্তি আলহাজ্ব দাউদ হায়দারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে?
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন—গ্রামীণ সমাজে ওয়াজ মাহফিল শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক নেতৃত্বেরও প্রতিফলন। ফলে এখানে মতবিরোধ সহজেই বড় আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, গ্রামবাসী ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা ছাড়া এই ধরনের বিরোধ নিরসন সম্ভব নয়।
তথ্য বলছে, আপাতত মধ্যডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও মাহফিল আয়োজন নিয়ে বিরোধ এলাকাবাসীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। অভিযোগ উঠছে—একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটিকে উত্তেজনা বাড়াতে ব্যবহার করছে। প্রশ্ন উঠছে—এ বিরোধ কেবল মাহফিল আয়োজন ঘিরেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি গ্রামীণ নেতৃত্ব ও সামাজিক বিভাজনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে?