সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অর্থপাচার: দুদকের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য
চট্টগ্রাম ব্যুরো.
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে অর্থপাচারের অভিযোগে দদকের অনুসন্ধান চরম চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের নয়টি দেশে তার বিপুল সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের পিপি মোকারম হোসাইন জানিয়েছেন, জাবেদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন উৎপল পাল ও মো. আবদুল আজিজ। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে এ নিয়ে বিস্তৃত তথ্য প্রকাশ করেছেন। জবানবন্দিতে বলা হয়েছে, ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা লোন নিয়ে তা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, জাবেদের নামে-বেনামে বিদেশের বিভিন্ন দেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে তার ৫৮২টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, “জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যেই ছয়টি মামলা হয়েছে। তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যও আসামি। বিদেশে সম্পদ গঠন ও লেনদেনের তথ্য অনুসন্ধান চলছে।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি প্রদানকালে উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, জাবেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও তারা বিশ্বস্ততার কারণে তার হয়ে সবকিছু পরিচালনা করতেন। উৎপল পালকে দুদক টিম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখছে, আর আবদুল আজিজ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
দুদক সূত্র জানায়, জাবেদের অর্থপাচারের বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এর আগে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন নিজেকে ‘সৎ ও নিষ্কলুষ’ পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে চলমান অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তার বিদেশে সম্পদ গঠন এবং অর্থপাচারের ঘটনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
দুদকের পদক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের নাগরিকদের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করবে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা কার্যকর।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধান শেষ হলে জাবেদের অর্থপাচারের পুরো চিত্র প্রকাশ পাবে এবং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে বিবেচিত হবে।