রূপসায় ২০০ একর জমি দখল করে ইটভাটার ব্যবসা,
এলাকাবাসীর অভিযোগে নতুন প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় প্রায় ২০০ একর সরকারি খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, বিগত সরকারের সময়ে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব খাটিয়ে চারটি ইটভাটার মালিক দীর্ঘদিন ধরে এসব জমি দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
কারা এই ইটভাটা মালিক?
লিখিত অভিযোগে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন—
গোলাম সারোয়ার (মালিক, মেসার্স ফারুক ব্রিকস-১ ও ২)
গোলাম রসূল (মালিক, স্টার ব্রিকস)
আ. কাইউম কোরাইশি (মালিক, মডার্ন ব্রিকস)
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশার প্রভাব খাটিয়ে এরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি ও গরিব মানুষের জমি ব্যবহার করে আসছেন।
তথ্য বলছে, নদীর পাড়ে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে আনা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নদীর ভেতর পাইপ ঢুকিয়ে বালু তোলা হয়। পরে পানি সরে গেলে আশপাশের জমির মাটিও ভেঙে পড়ে। সেই মাটিও ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, নদীর ভাঙনও বাড়ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর ইটভাটা মালিকরা ফরোয়ার্ড সেলের নামে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। এরপর থেকে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে থানায় ও আদালতে একাধিক মামলা চলছে বলে জানা গেছে।
দখলকৃত জমির বিবরণ
লিখিত আবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী
ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি: চরশ্রীরামপুর ও তালিমপুর মৌজায় প্রায় ১০০ বিঘা।
খাস জমি: চরশ্রীরামপুর, তালিমপুর, জয়পুর, ভদ্রগাতি ও নন্দনপুর মৌজায় প্রায় ৮০ বিঘা।
অর্পিত সম্পত্তি: চরশ্রীরামপুর মৌজায় প্রায় ৪৫ বিঘা।
সব মিলিয়ে দখলকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ২০০ একর।
এলাকাবাসী লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, “আমরা বহু বছর ধরে ভোগদখলে থাকা জমি জোর করে নিয়ে গেছে। সরকারের খাস জমি ও অর্পিত সম্পত্তিও দখল করে তারা ব্যবসা করছে। ভূমি সচিবের জরুরি হস্তক্ষেপ না হলে জমি উদ্ধারের সুযোগ থাকবে না।
প্রশ্ন উঠছে, প্রায় ২০০ একর সরকারি ও বেসরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে থাকলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
ফরোয়ার্ড সেলের নামে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এখনো তদন্ত বা ব্যবস্থা হয়নি কেন?
নদী তীরবর্তী জমি কাটায় পরিবেশ ও ভাঙনের ঝুঁকি কীভাবে সামলানো হবে?
রূপসা উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “খাস জমি উদ্ধারে প্রক্রিয়া চলছে। তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক সময় মাঠপর্যায়ে জটিলতা তৈরি হয়।
তথ্য বলছে— বহু বছর ধরে খাস জমি ও অর্পিত সম্পত্তি দখল করে ব্যবসা চলছে। অভিযোগ বলছে— এর পেছনে আছে ক্ষমতাসীনদের ছায়া ও প্রভাবশালী মহলের স্বার্থান্বেষী তৎপরতা। এলাকাবাসী জমি উদ্ধারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের দখলবাজি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।