অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : Sep 5, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প দুর্নীতি, অকার্যকর যন্ত্রপাতি ও নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা

রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প দুর্নীতি, অকার্যকর যন্ত্রপাতি
ও নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা 

জাহিদ সুমন :

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নগর দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির’ লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প’।  কিন্তু বাস্তবে এটি রূপ নিয়েছে দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্বের চূড়ান্ত ব্যর্থতার এক ভয়ংকর দৃষ্টান্তে। প্রায় শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এখন গ্যারেজে পড়ে আছে মরিচা ধরা অবস্থায়, আর নগরবাসীর সুরক্ষা এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে: সাবেক (PD) আব্দুল লতিফ হেলালি। সাবেক (APD) আমিনুর ইসলাম সুমন ও সাবেক প্রকল্প ব্যবস্থাপক (PM) ওয়াহিদ সাদিক শুভ। 

এই প্রকল্পে দুর্নীতি এবং অপচয়ের অভিযোগের মূল ফোকাস তিনজনের দিকে। কর্মকর্তাদের একাংশ দাবি করছেন, এদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, যাদের নির্দেশেই কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে। এক সময় মন্ত্রণালয় থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব 

শহিদউল্লাহ খন্দকার। এই তিনজনের মধ্যে সমন্বয় তো ছিলই না বরং তারা আলাদাভাবে কমিশন ভাগাভাগি করতেন বলে জানা গেছে- দাবি করেন এক প্রকল্প কর্মকর্তা, তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

প্রকল্প পরিচালনা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। একাধিক কর্মকর্তা জানান, PD-APD-PM এর মধ্যে ছিল নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতা। এই প্রোজেক্টের অধিকাংশই কর্মচারী ছিল সাবেক প্রকল্প পরিচালক (PD) আব্দুল লতিফ হেলালির কর্তৃক নিয়োকৃত , সহকারী প্রকল্প পরিচালক (APD) আমিনুল ইসলাম সুমন, এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক (PM) ওয়াহিদ সাদিক শুভ। 

 তথ্যসূত্র বলছে, অনেক যন্ত্রাংশ ২০২১ সালে রাজউকে সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেগুলো ব্যবহার শুরু হয়নি। প্রকল্পে বারবার সময় বাড়ানো, শুধুমাত্র দুর্নীতি করার জন্য। শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। উদ্দেশ্য ছিল ২০২০ সাল নাগাদ রাজধানীকে ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুত করা। কিন্তু সেটা হয়নি সময় বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে আর প্রকল্প পরিচালকসহ সকলের পকেট ভারি হয়েছে।

অনুসন্ধান সূত্র বলছে প্রকল্পের মেয়াদ তিনবার বাড়ানো হয়। প্রথম প্রকল্পের বাজেট ছিল ৪২৯ কোটি তিন ধাপে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৫৬৭ কোটি টাকায়। যদিও ২০২১ সালেই ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয় বলে দাবি করা হয়েছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সেল গঠিত হয়নি, যা ছিল প্রকল্পের মূল
উদ্দেশ্যগুলোর একটি।

প্রকল্প পরিচালকের (PD) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির যোগ্যতা ও কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সূত্র বলছে, প্রকল্প পরিচালক নিজের নামের আগে ‘ড.’ বা ‘ডক্টর’ উপাধি ব্যবহার করলেও তার পিএইচডি ডিগ্রির কোন সরকারি স্বীকৃতি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। যেটি সুস্থ তদন্ত হলে বের হয়ে আসবে।

জানা গেছে, প্রায় ১৫০টির বেশি যন্ত্রপাতি-যার মধ্যে রয়েছে ২০০০ কেএন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন, অ্যাসফল্ট পেভমেন্ট অ্যানালাইসিস যন্ত্র, হাইড্রোলিক পাম্পসহ আরও বহু অত্যাধুনিক সরঞ্জাম-যেগুলো কোটি কোটি টাকায় কেনা হলেও সেগুলোর বেশিরভাগই চালু করা হয়নি। কিছু যন্ত্রের মোড়কও খোলা হয়নি। কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ৮২ জন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদকে। 

শুধুমাত্র ওভার ইনভয়েসিং করে দুর্নীতির মাধ্যমে ইনকাম করাটাই মূল লক্ষ্য ছিল।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এটা ছিল এক ধরনের ‘পলিসি লুট’-দৃষ্টিনন্দন প্রযুক্তি কিনে কমিশন খাওয়ার একটা ছক একটা প্রজেক্ট ডিরেক্টর বাইরে কিছুই হতে পারে না। ভূত সরিষা খেতেই ছিল। অভিযোগ আছে প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সবখানে ছিল বিশৃঙ্খলা, আর্থিক অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতা।

পরিকল্পনা কমিশনের এক গোপন অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির নীতিগত দিকেই ছিল দুর্বলতা, যা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, চউ এবং অচউ তাদের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ খাতে বাজেট বিলিয়ে দিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা দিয়ে যন্ত্র কেনা হলো, অথচ নেই কোনো প্রশিক্ষিত জনবল- শত শত কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে ভবন, এটা তো পরিকল্পিত অপচয় নয় তো কী?- প্রশ্ন নগর পরিকল্পনাবিদদের। 

অপচয় ও কমিশন বাণিজ্যের ভয়ংকর চিত্র, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রশিক্ষণ ও সফর খাতে ৬৪ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়। অথচ অধিকাংশ প্রশিক্ষণ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, কম্পিউটার, প্রজেক্টর, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সেট কিনতে দেখানো হয় ৮-১০ গুণ বেশি দাম। বিদেশ সফর ও কর্মশালায় অংশগ্রহণের নামে “ফাঁপা বিল” তৈরি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। একটি ট্যাবলেট কম্পিউটারের দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়িত প্রকল্পে এ ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে শুধু অর্থ নয়, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  সূত্র বলছে, অডিট রিপোর্ট, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ফাইল এবং কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট হয়-দুর্নীতি ছিল সুপরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক। যেটিতে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আরও অনেকেই জড়িত ছিল।
নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে শুরু হওয়া এ প্রকল্প দুর্নীতির এমন ছায়া ফেলেছে, যার প্রভাব দুর্যোগকালে মারাত্মক হতে পারে। এখনই যদি এসব অনিয়ম তদন্ত না হয়, তবে ভবিষ্যতে 
জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে এই ব্যর্থ প্রকল্পের খেসারত দিতে হতে পারে। সকল ব্যয়ের নিরীক্ষা ও দুর্নীতির বিচার, ব্যবহৃত ও অকেজো যন্ত্রপাতির পৃথক প্রতিবেদন, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি তদন্ত, ভবিষ্যতে বিদেশি অনুদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ইতিমধ্যে বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৭/৮/২৫, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মহাখালী ভবন পরিদর্শন করা হয়।  সেখানে রাজউকের কারিগরি টিম উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় (PD) আব্দুল লতিফ হেলালী, বর্তমান সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ যৌথভাবে চেষ্টা করছে ট্রাস্ট গঠন করার জন্য, যেই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধায়নের থাকবে আব্দুল লতিফ হেলালী, এবং দুর্নীতিপরায়ণ তার অন্যান্য সহযোগীরা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সেই সুরঞ্জন বালির অভিযোগ এবার হাসিনা-সিনহার বিরুদ্ধে

1

অপু বিশ্বাসের সাদা গোলাপ আর মিষ্টি হাসি: রহস্য এবং আবেগের মি

2

নুরের ওপর হামলার দায় সরকারকে নিতে হবে: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

3

বিশ্বকাপ নিয়ে রিভালদোর সঙ্গে তর্কে জড়ালেন নেইমার

4

রূপসায় ২০০ একর জমি দখল করে ইটভাটার ব্যবসা

5

রোহিঙ্গাদের জাহাজে তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে ভারত

6

সিলেটে শপিংমলে লুটপাট নিয়ে পুরোনো ভিডিও দিয়ে বিভ্রান্তি শনাক

7

সাংবাদিকদের দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন প্রদানের আহ্বান অনলাইন এডিট

8

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আলোচনায় বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী আব্দুল ছ

9

কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে ইউটার্ন বন্ধ ঘোষণা

10

রিকশাচালককে গুলি করে হত্যা মামলায় কারাগারে চিকিৎসকসহ পাঁচজন

11

কলাপাড়ায় আয়কর সচেতনতা সভা

12

গাজাযুদ্ধে ১৯ হাজার শিশু হত্যা করেছে ইসরায়েল

13

ডেমুর পর এবার লাগেজ ভ্যান: ৩৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ভরাডুবি

14

সন্দ্বীপের হত্যা মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার

15

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকে ঢুকলে দেখা যাচ্ছে নতুন বার্তা

16

সোশ্যাল মিডিয়ায় জুয়া: তরুণ প্রজন্মের নীরব শিকার

17

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অর্থপাচার: দুদকের অনুসন্ধানে চাঞ্চ

18

ফজলুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ ও ছবিতে গণজুতা নিক্ষেপ করবে ব

19

খুলনায় শিপইয়ার্ড সড়ক: ১২ বছরেও শেষ হয়নি কাজ

20