বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল, দুদকের অভিযান, উঠছে নানা প্রশ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি
সম্প্রীতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একদল কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার চুক্তি করছেন। সেখানে প্রকাশ্যেই নগদ দুই লাখ টাকার লেনদেনও ধরা পড়ে।
অভিযোগ উঠেছে—এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে বিআইডব্লিউটির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের জড়িত থাকার ইঙ্গিত রয়েছে।
ভিডিওতে এক কর্মকর্তা নিজ মুখে স্বীকার করতে শোনা যায়, “টাকা দিলে কাজ পাওয়া যায়।”
বুধবার বিকেলে বিষয়টি সামনে আসতেই দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে একটি দল অভিযান চালায় বিআইডব্লিউটির নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিমের কক্ষে।
দুদক কর্মকর্তারা বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই করে এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ শাখার কর্মকর্তা ওবায়দুল করিম খান, আরেকজন হচ্ছেন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান। এ ছাড়া দুদকের হাতে থাকা প্রমাণ বলছে—অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিমই এ চক্রের অন্যতম মূল ব্যক্তি।
তথ্য বলছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে অযোগ্য ও প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দিচ্ছে। ঠিকাদাররা চুক্তির বাইরেও নগদ অর্থ দেন, আর এর একটি বড় অংশ ভাগ হয়ে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের ঠিকাদারি আহ্বায়ক কমিটি থেকে শুরু করে পরিচালন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির এ রকম প্রমাণ নিয়মিত মিলছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন,
“দুদক তদন্ত করছে, দেখা যাক কী হয়। এ বিষয়ে আমি জড়িত নই।”
তবে প্রশ্ন উঠছে—ভিডিওতে সরাসরি নাম উঠে আসার পরও কি কেবল অস্বীকার করলেই দায়মুক্তি মিলবে?
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, চেয়ারম্যানের আত্মীয় ও চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে।
বিআইডব্লিউটিএ’র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের এভাবে টেবিলের নিচে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলছে—“কাজ পেতে যদি ঘুষই মূল শর্ত হয়, তবে সৎ ও যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় দাঁড়াবে?”