রিকশার হ্যান্ডেল থেকে বিসিএস ক্যাডার: নান্দু সরকারের স্বপ্নপূরণ
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের সন্তান নান্দু সরকার। বয়স এখন ষাটের কোঠায়। তবে জীবনের প্রতিটি দিন তিনি কাটিয়েছেন ঘাম ও শ্রমে ভর করে। শহরের রাস্তায় রিকশার প্যাডেলে পা চালিয়েছেন, শুধু একটিই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে—ছেলেকে বড় মানুষ করার।
মগবাজারের একটি মেসে একা থাকেন নান্দু সরকার। ভোর থেকে রাত অব্দি রিকশা চালিয়েই চলে তাঁর সংসার। রিকশার মালিককে ভাড়া দেওয়া, নিজের খাওয়াখরচ বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র তিন থেকে চারশ টাকা। তবে ছেলের পড়াশোনার খরচের ক্ষেত্রে কোনোদিন কার্পণ্য করেননি।
শিক্ষাবিদদের মতে, নান্দু সরকারের মতো বাবা-মায়ের ত্যাগই গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা প্রজন্মকে দেশের নেতৃত্বে পৌঁছে দিচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের গল্পগুলো প্রমাণ করে যে সীমাহীন দারিদ্র্যের ভেতরেও মানুষের স্বপ্ন অটুট থাকতে পারে।
নান্দু সরকারের ছেলে মনিরুজ্জামান রাজু ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। রিকশার হ্যান্ডেল ধরা হাত আজও কাঁপে, তবে সেটি আর কষ্টের জন্য নয়—বরং আনন্দের জন্য।
হাসিমুখে বাবার বক্তব্য—
“বাবা, হামারে আর বেশিদিন রিকশা চালাইতে হইবো না। আমার ছেলে তো বিরাট অফিসার হইছে।”
নান্দু সরকারের অমানুষিক পরিশ্রম, অদম্য ধৈর্য ও অসীম স্বপ্নপূরণের এই গল্প কেবল একজন বাবার সাফল্যের কাহিনি নয়—এটি বাংলাদেশের হাজারো সংগ্রামী অভিভাবকের জীবনের প্রতিচ্ছবি। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ত্যাগ ও শ্রম কখনো বৃথা যায় না।