নওগাঁর মান্দায় সদ্য বিদায়ী ওসি মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার
তথ্য বলছে, নওগাঁর মান্দা থানার সদ্য বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, তিনি দাপটের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য, দালালতন্ত্র এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতেন।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও অতীতের বিতর্ক আড়াল করতে তিনি এ পদে যোগদান করেছিলেন। এই অভিযোগগুলো স্থানীয় মহলে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে বিতর্কিত অতীত থাকা সত্ত্বেও তিনি মান্দা থানায় দায়িত্ব পেলেন? অভিযোগ রয়েছে, সরকার ঘোষিত নীতিমালা অমান্য করে তিনি রাজনৈতিক দোহাই ও ভোল পাল্টানো কৌশলে ওসির পদে আসীন হন।
অতীতে নাটোর সদর, পাঁচবিবি ও পোরশা থানায় দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে “ফ্যাসিস্ট সরকারের যন্ত্র” হয়ে ওঠার অভিযোগও উঠে এসেছে। তথ্য বলছে, রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ ও অর্থের বিনিময়ে পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের তুষ্ট করেই তিনি এ পদ লাভ করেছিলেন।
সূত্র জানায়, মান্দা থানায় যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় ঘুষের রাজত্ব। অভিযোগকারীরা বলছেন, মামলা করা, চার্জশিট দেওয়া কিংবা জামিনে মুক্তি — প্রতিটি ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময় ছাড়া কোনো সমাধান পাওয়া যেত না।
এক ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, “আমাকে গ্রেফতার না করার শর্তে ওসি মনসুর রহমান আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পরে আমাকেই গ্রেফতার করেন।”
ভারশোঁ গ্রামের ডলি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহিরাগত দালাল নিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে নগদ এক লাখ টাকা ও জিনিসপত্র লুট করে নেয়।”
অন্যদিকে, ছোট মুল্লুক গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, “গুরুতর অপরাধের শিকার হলেও থানা মামলা নেয়নি। টাকা ছাড়া কোনো ন্যায়বিচার নেই, তাই আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, “উপরে থেকে চাপ থাকে নির্দিষ্ট লোকজনের সাথে কাজ করতে। অনেক কিছু আমাদের হাতে থাকে না।”
এই বক্তব্য প্রশাসনিক অনিয়মের ইঙ্গিত দেয় বলে সুশীল সমাজ মনে করছে।
অভিযোগগুলো অস্বীকার করে সদ্য বিদায়ী ওসি মনসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে নেই ওই রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার বিষয়ে মান্দা থানার নতুন ওসির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, “প্রশাসনের নীরবতা ইঙ্গিত করছে, এখানে আরও গভীর যোগসাজশ থাকতে পারে।
মান্দার সাধারণ মানুষ, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ অভিযোগগুলোর দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। তাদের বক্তব্য, “যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এবং তাকে যেন আর কোনো থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া না হয়।”
ওসি মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও জনআস্থার প্রশ্নকে ঘিরে। এখন দেখার বিষয় — অভিযোগগুলো কি কেবল জনশ্রুতি হিসেবেই থেকে যাবে, নাকি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হবে।