মৃত ব্যক্তির ৪ কোটি টাকা
আত্মসাতের অভিযোগ
ইসলাম সবুজ
পুরান ঢাকার বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী মেঘলা এন্টারপ্রাইজের মালিক মামুন গত বছরের ৩ জুন লিভারজনিত রোগে মারা যান। বাদমতলী ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ হাজীর নেতৃত্বে ১৮/১ শাহজাদা লেন, বাদামতলীর গোডাউনে থাকা সাড়ে তিন কোটি টাকার খেজুর ও অন্যান্য ফল মৃত্যু ব্যক্তির ওয়ারিশদের না জানিয়ে সরিয়ে ফেলে সিরাজ হাজীর লোকজন।
মার্কেটে প্রায় ৭০ লাখ টাকার খেজুর ও অন্যান্য ফল বাকিতে বিক্রি বাবদ টাকা পেতেন মামুন। এসব টাকাও আত্মসাৎ করেন সিরাজ হাজী। এমনকি ব্যাংকে থাকা এক কোটি টাকা উধাও বলে জানান মামুনের ওয়ারিশরা।
মামুনের একমাত্র ছোট ভাই মাসুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ভাই মামুন বহু বছর যাবৎ খেজুর ছাড়াও বিদেশী নানা ফলের ব্যবসা করে আসছেন। ভাইয়ের স্ত্রীর নাম হাজেরা বেগম টুনি। তবে নিঃসন্তান ছিলেন তারা। এক ভাই ও এক বোন ছাড়াও একটি মেয়ে পালত ভাই মামুন। তিনি বলেন, গত বছর ৩ জুন লিভার ক্যান্সারে মারা যায়। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেঘলা এন্টারপ্রাইজ। যার গোডাউন ১৮/১ শাহজাদা মিয়া লেন, বাদামতলী, কোতয়ালি, ঢাকা। ভাইয়ের সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসা করতাম। আমার কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা নেয় ভাই মামুন। ব্যবসার লভ্যাংশ দিতো নিয়মিত। লিভারজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন গত বছরের ৩ জুন মারা যান মামুন। ২০২৪ সালের ৬ জুন গোডাউন ফাঁকা। এরপর বিভিন্ন সময়ে গোডাউনের বাড়ির মালিকের কাছে জানতে চাইলে সে সিরাজ হাজীর কথা বলে। পরে বহুবার চেষ্টা করি তার সাথে দেখা করতে। তার বাহিনী ও সিরাজ আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর উপায় না দেখে ফারুক হোসেন রানা নামের এক আইনজীবীর মাধ্যমে তিনবার নোটিশ পাঠানো ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন লোকজনকে জানাই। পরে গত মে মাসে বিএনপি নেতা সুমন ভূইয়ার লোকজন ছাড়াও বেশ কজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে আমাকে ১০ লাখ টাকা দেয়, আর আমার বিধবা ছোট বোনকে দেয় ২ লাখ টাকা। বাকি টাকার কথা জানতে চাইলে ক্ষেপে যান সিরাজ হাজী। যা উপস্থিতি লোকজনের সামনেই এ ঘটনা ঘটায়।
তিনি বলেন, সিরাজ হাজী অন্যায়ভাবে আমরা ওয়ারিশদের চার কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন। তবে তার ভাবী টুনিকে ব্যাংকে থাকা এক কোটি টাকা তুলে নিতে বললে সে টাকাও ঊধাও। মুসলিম আইনে ওয়ারিশদেরকে বণ্টন নামা তোয়াক্কা না করেই চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেন সিরাজ হাজী। এর বিচার কেউ করতে পারে না। তিনি বলেন, তার ভাবীকে ভুল বুঝিয়ে ব্যাংকের এক কোটি টাকা তুলে নিতে বলে। আর সিরাজ হাজী নিজে বাকি চার কোটি খেয়ে ফেলে।
মৃত মামুন এর আরেক ওয়ারিশ ছোট বোন মরিয়ম বলেন, আমার স্বামী মারা গেলে ভাই মামুনই দেখভাল করত। ভাইয়ের টাকা-পয়সার অভাব ছিল না। বাড়িতে বিল্ডিং করছে। তবে কোনো সন্তান ছিল না। মেঘলা নামে একটি মেয়ে পালত ভাই। তাকেও বিয়ে দিয়েছে। গত বছর ৩ জুন লিভারের সমস্যায় মারা যায় ভাইটা আমার। ঠিক তিন দিন পরেই গোডাউন লুট করে সিরাজ হাজী। এ কেমন বিচার আল্লাহর। এ বছর মে মাসে দুই লাখ টাকা দেয় আমাকে। অথচ ভাইয়ের চার কোটি নগদ টাকার মাত্র দুই লাখ টাকা পেলাম। সিরাজ হাজীর বিচার চাই।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বাদামতলীতে আতঙ্কের নাম সিরাজ হাজী ওরফে সিরাজুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতি বছর রমজানে পচা খেজুর অকশনের নামে বিক্রি করে কোটি টাকা আয়, বাদমতলীতে আসা ফলের গাড়ি থেকে দৈনিক এক কোটি টাকা চাঁদাবাজি, বাংলাদেশ ব্যাংকে অন্য ব্যবসায়ীদের এলসি আটকানো ও দেরিতে করা, পতিত সরকারের হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে অর্থায়ন ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বজ্রযোগিনী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত সিরাজ হাজী কাউকেই তোয়াক্কা করে না। এমনকি তার ছেলে দু’টো স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের সাথে কুকুরের মতো আচারণ করে।
জানা গেছে, বাদামতলীতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার। এ দিন ছাড়া প্রতিদিনই কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন শ’ ফলের গাড়ি ঢুকে বাদামতলীতে। প্রতি গাড়ি থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নেয় সিরাজ হাজি। টাকা তুলে মৃত ফল ব্যবসায়ী মজিদ চেয়ারম্যানের বড় ছেলে মোমিন ছাড়াও বেশ কজনকে দিয়ে। এ ছাড়া ঝাড়ুদারের নামেও গাড়ি প্রতি দৈনিক ৫০০ টাকা তোলা হয়। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তার পরিণতি খুব খারাপ করে দেয়। এ দিকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান তিনি। তার বিরুদ্ধে ২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যার মামলা থাকলেও কোনো তোয়াক্কা করেন না তিনি। ঢাকায় একজন বিএনপি নেতাকে বাপ ডেকে ও একজন উপদেষ্টার নাম ভাঙ্গিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন সিরাজ হাজী। এ বিষয়ে জানতে সিরাজ হাজীকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।