প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 6, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 2, 2025 ইং
১৬ বছর প্রবাস শেষে আশ্রয়হীন জসিম উদ্দিন
১৬ বছর প্রবাস শেষে আশ্রয়হীন জসিম উদ্দিন: ন্যায়বিচারের প্রশ্ন
রমজান আলী রানা, কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাকড়া ইউনিয়নের এক প্রবাসফেরত মানুষ আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফেরার পরও মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি তাঁর। প্রশ্ন উঠছে—যে মানুষ দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অবদান রেখেছেন, দেশে ফিরে কেন তিনি আশ্রয়হীন?
তথ্য বলছে, চরকাকড়ার আলিম উদ্দিন মাঝি বাড়ির বাসিন্দা আবুল কাশেমের ছেলে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন কর্মসংস্থানের জন্য দীর্ঘ সময় বিদেশে ছিলেন। প্রবাস জীবনে উপার্জিত সমস্ত অর্থ তিনি বাবার কাছে পাঠাতেন। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়।
সূত্র জানায়, জসিম উদ্দিনের পিতা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এবং বসতভিটাসহ যাবতীয় সম্পত্তি দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে হেবানামা করে দেন। ফলে প্রবাসে উপার্জন করা অর্থের বিনিময়ে নিজের বাড়িতেই আর ঠাঁই হয়নি জসিম উদ্দিনের।
অভিযোগ উঠছে, পরিবারের ভেতরের এই সিদ্ধান্তে উপার্জনকারীর ন্যায্য অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, "যে ছেলে দেশের বাইরে থেকে টাকা পাঠিয়ে সংসার চালিয়েছে, তারই ঘর এখন নেই—এটা কি ন্যায়সঙ্গত?"
বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে জসিম উদ্দিন কখনো প্রতিবেশীর রান্নাঘরে, কখনো কারো ঘরের কোণে আশ্রয় নিচ্ছেন। ঝড়-বৃষ্টির রাতেও তাঁকে পরিবারের সঙ্গে অন্যের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন—আইনের আশ্রয় নিয়েও কি তিনি তাঁর ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন? মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হেবানামা বা সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। তবে প্রবাসফেরত জসিম উদ্দিনের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার কারণে সে পথ কতটা সম্ভব, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
জসিম উদ্দিন নিজেই জানান, “আমি ১৬ বছর বিদেশে কষ্ট করে যা আয় করেছি সব বাবার কাছে পাঠিয়েছি। এখন দেশে ফিরে আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পথে পথে ঘুরছি। আমি শুধু একটি আশ্রয় চাই।”
এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলছে—বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো অসংখ্য প্রবাসীর পরিণতি কি দেশে ফিরে এভাবেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়া?
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ উদয়ের পথে